সৌন্দর্যের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো চুল। শীতকালে আমাদের ত্বকের পাশাপাশি এই চুলেরও দরকার হয় একটু বাড়তি মনোযোগ, একটু বাড়তি যত্ন। এই শীতে চুল পড়ে যাওয়া, রুক্ষ্ম ও খসখসে হয়ে যাওয়া, উজ্জলতা নষ্ট হওয়া ইত্যাদি সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। ফলে এসব নিয়ে অনেকেরই থাকে অনেক দুশ্চিন্তা। জানেন কি,চুলের এইসব সমস্যা রোধ করতে পারবেন আপনি নিজেই আর তার জন্য প্রয়োজন শুধু একটুখানি যত্ন। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে কয়েকটি কাজ করলে আপনার চুল হয়ে উঠবে ঘন, কালো, উজ্জ্বল যাবে। দেখে নিন কি করলে এই শীতেও আপনার চুল থাকবে সব সময়ের মতোই স্বাস্থ্যোজ্জল।
১) ভালোভাবে চুল আঁচড়ান
ঘুমাতে যাবার আগে চুল আঁচড়ানোর অভ্যাসটা আপনার পরিবারের বয়স্ক নারীদের মাঝে লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই? তাদের এই কাজটির পেছনে যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে। চুল আঁচড়ানোর ফলে মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল ভালো হয়। ফলে চুলের গোড়া শক্ত হয়ে চুল পড়ার পরিমাণ কমিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, চুলের গোড়ায় উৎপন্ন হওয়া প্রাকৃতিক তেল পুরো চুলে ছড়িয়ে দেবার কাজটাও এভাবে হয়ে যায়।
২) এক গ্লাস দুধ, ১ চামচ মধু ও ১০ টি বাদাম
চুলকে সুস্থ ও সুন্দর থাকার প্রথম শর্ত হচ্ছে ভেতর থেকে পুষ্টি যোগানো। রাতের বেলা এক গ্লাস দুধের সাথে ১ টেবিল চামচ মধু ও ১০ টি কাঠ বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করুন। প্রাচীন আয়ুর্বেদ মতে এই উপাদান গুলো আপনার চুল ও ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি জুগিয়ে আপনাকে করে তুলবে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।
৩) ব্যবহার করুন কোমল বালিশের কভার
কি ভাবছেন? মনে করছেন বালিশের কভার তো নেহায়েতই তুচ্ছ একটা জিনিস। বড়জোর ঘরের শোভা বাড়ানোর কাজ করে সেটা। যেনতেন একটা বালিশের কভার ব্যবহার করলেই হয়ে যায়। মোটেই এমনটা ভাববেন না! যতক্ষণ ঘুমিয়ে আছেন ততক্ষণ এই বালিশের সংস্পর্শে থাকবে আপনার চুল। খসখসে বালিশের কভারের সাথে ঘষা খেয়ে আপনার চুল ফেটে বা রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। ঘুমানোর সময় ব্যবহার করুন সিল্ক বা সাটিনের কোমল কভার। এবং অবশ্যই পরিচ্ছন। কেননা নোংরা বালিশের কাভার বাড়িয়ে দেবে চুলে খুশকি ও উকুনের সমস্যা। দরকার হলে সেটা শুধুমাত্র ঘুমানোর সময়ের জন্য রাখুন। এর জন্য আপনার চুল যে কতটা উপকৃত হবে তা চিন্তাও করতে পারবেন না।
৪) ভেজা চুলে ঘুমাবেন না
ভেজা চুল বেঁধে রাখার অভ্যাস যাদের আছে তারা অতিসত্বর এই অভ্যাস ত্যাগ করুন। আর এই ভেজা চুল নিয়ে ঘুমাতে যাবার কথা তো চিন্তাও করবেন না। শুকনো চুলের চাইতে ভেজা চুল অনেকটা নাজুক হয়ে থাকে, কোনও রকমের অযত্ন সহ্য করতে পারে না। ভেজা চুল বেঁধে রাখতে গেলে চুলের গোড়া নরম হয়ে চুল পড়া বাড়িয়ে দেয়। আর এই ভেজা চুল নিয়ে যদি ঘুমাতে যান, তখন সেটা ঠিকমতো শুকাবে না, ভ্যাপসা হয়ে থাকবে এবং খুশকি আমদানি করবে। আর চুলে খুশকি হলে যে চুলের সমস্যা অনিবার্য তা নিশ্চয়ই আপনাকে বলে দিতে হবে না। ঘুমাবার আগে একটু সময় নিয়ে চুল শুকিয়ে ফেলুন।
৫) বাদাম তেলে হট অয়েল ম্যাসাজ করুন
মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল ভালো করার জন্য আরেকটি ভালো উপায় হলো হট অয়েল ম্যাসাজ। শুধু তাই নয়। শীতকালে খুশকি বেশি হয়, সেটা কমিয়ে আনতেও অনেক কার্যকরী এই ম্যাসাজ। শীতের রাতে শুকনো চুলে হালকা গরম তেল ম্যাসাজ করে ভালোভাবে আঁচড়ে বেঁধে নিন। কোমল একটি বালিশের কভারে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে উঠে শ্যাম্পু করে ফেলুন ভালো করে। দেখবেন খুশকির আক্রমন তো কমেছেই, সাথে চুল হয়ে উঠেছে মাখনের মত মোলায়েম ও উজ্জ্বল। এটা সপ্তাহে ২/৩বার করুন।
৬) চুল বেঁধে ঘুমান
অনেকেই চুল ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে যান। এতে কিন্তু চুলের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শরীরের নিচে চাপা পড়ে, ঘষা লেগে চুল ফেটে যায় এবং এর ফলাফলস্বরূপ চুল পড়ে যেতে শুরু করে। ঘুমাতে যাবার আগে চুল আঁচড়ে তাকে ঝুঁটি করে বা বেণী করে ফেলুন। এতে চুল থাকবে সুরক্ষিত। চুল ফাটা এবং চুল পড়ার পরিমাণ কমে যাবে অনেকটাই। আর চুলের সৌন্দর্য যে বজায় থাকবে তা তো বলার অপেক্ষা রাখেই না। তাছাড়া রাত ভর বালিশে চাদরে ঘষা খেয়ে সকালে চুল হয়ে ওঠে প্রাণহীন আর শুষ্ক। বেঁধে ঘুমালে সে সমস্যাও দূর হবে।
0 comments:
Post a Comment