Pages

Subscribe:

Ads 468x60px

Friday, August 8, 2014

চিকিত্সকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে


অসুখ হলে ওষুধ খেতে হয়সবাই জানি, কিন্তু সঠিক নিয়মে ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনেকেই অনুভব করি না। ওষুধ খেতে আমরা যতটা ৎপর, ওষুধ খাওয়ার নিয়ম মানতে ততটাই উদাসীন। আমাদের অবহেলা জীবনরক্ষাকারী ওষুধকে করে তুলতে পারে জীবনবিনাশী বিষ। 

ওষুধ গ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমেই যে অনিয়মটা করি তা হলো চিকি ৎসকের পরামর্শ না নেওয়া। আমরা নিজেরাই নিজেদের চিকি ৎসা করি, কখনো আত্মীয়, কখনো বন্ধুর পরামর্শ নিই, কখনো চিকি ৎসকের চেয়ে ওষুধ বিক্রেতার ওপর বেশি নির্ভর করি।অমুক ওষুধে তমুক ভালো হয়েছিল, তাই আমিও ভালো হব’—এমন চিন্তাই আমাদের মধ্যে কাজ করে। অথচ লক্ষণ এক হলেই অসুখ এক হবে, এমন কোনো কথা নেই। আবার একই রোগে একই ওষুধের মাত্রা রোগীভেদে ভিন্ন হতে পারে। শুধু অসুখে নয়, ওষুধ সহজলভ্য হওয়ায় সুখেও আমরা অন্যের পরামর্শে ওষুধ খাই। মোটা হওয়ার জন্য স্টেরয়েড বা শক্তি বাড়ানোর জন্য ভিটামিন খাই যেন ভাতের চেয়ে বেশি। এসবের মারাত্মক, কখনো জীবনবিনাশী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
যদিও বা কখনো (বাধ্য হয়ে) চিকি ৎসকের পরামর্শ নিই, ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিকি ৎসকের বেঁধে দেওয়া বিধিনিষেধ মানি কম। সময়মতো ওষুধ খাওয়া, খাওয়ার আগে না পরে তা বুঝে খাওয়া, পর্যাপ্ত পানি পান করাএসব আমরা খেয়াল রাখি না। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজের ক্ষেত্রে আমরা পুরোপুরি উদাসীন থাকি। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া।জ্বর ভালো হয়ে গেছে, অ্যান্টিবায়োটিক আর কী দরকারভেবে নিজেরাই ওষুধ বন্ধ করে দিই। আবার অন্যদিকে কয়েক দিনে জ্বর ভালো না হলেওষুধ ঠিক নাইভেবে তা বন্ধ করে দিই এবং অন্য চিকি ৎসকের কাছে নতুন ওষুধের প্রত্যাশায় যাই। যেসব অসুখে দীর্ঘদিন বা আজীবন ওষুধ খেতে হয়, সেখানে আমরা অসুখ নিয়ন্ত্রণে এলেই তা বন্ধ করে দিই, বুঝতে চাই না যে রোগ ভালো হয়নি, নিয়ন্ত্রণে আছে কেবল। একসময় লোকমুখেক্যানসারের ওষুধশুনে বাতের ওষুধ বন্ধ করার ঘটনা প্রচুর হয়েছে। ওষুধ শুরুর মতো বন্ধ করার সময়ও আমরা নিয়ম মানি না। যেসব ওষুধ হঠা বন্ধ করা যায় না, তা নিজেরাই হঠা বন্ধ করে দিই। 

ওষুধ নিয়ে অনাচারে কী ক্ষতি হতে পারে? প্রথম কথা, যে রোগের জন্য ওষুধ সেবন করা তার উপশম হবে না, বরং খারাপ হতে পারে। ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণুর আবির্ভাব ক্ষেত্রে সবচেয়ে মারাত্মক হুমকি। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার জীবাণুর বিরুদ্ধে এদের অকার্যকর করে দিচ্ছে। সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে যে রোগ শুরুতেই ভালো করা যেত, ভুল ব্যবহারের কারণে তা আর সম্ভব হচ্ছে না, নতুন দামি ওষুধ দরকার হচ্ছে, কখনো তাতেও কাজ হচ্ছে না। বিশেষভাবে বলা যায় যক্ষ্মার কথা, যেখানে কমপক্ষে ছয় মাস ওষুধ খেতে হয়, অথচ অনেকেই কয়েক মাস খেয়েভালো হয়ে গেছিমনে করে তা বন্ধ করে দেয়। ফলে তা মারাত্মক মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবিতে পরিণত হয়, যা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন। আর্থিক দিকটাও বিবেচনা করা জরুরি। যে চিকি ৎসা এখন সুলভে হচ্ছে, অবিবেচকের মতো ওষুধ খেলে বা না খেলে পরে ব্যয়বহুল হয়ে যেতে পারে। 

শুধু জীবাণু সংক্রমণ নয়, হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি অসুখেওমাঝেমধ্যে ওষুধের ব্যবহারউপকারের চেয়ে অপকারই বেশি করে।
নিয়মিত ওষুধ খেলেও যদি সেবনবিধি না মানা হয়, তবে অনেক ওষুধই অকার্যকর হয়ে যায়। খালিপেটে খাওয়ার ওষুধ ভরা পেটে খেলে তা না খাওয়ার মতোই হবে। ছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই এক ওষুধ অন্য ওষুধের উপস্থিতিতে কাজ করে না। অজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শে এসব ওষুধ একত্রে খেলে লাভ তো হবেই না, বরং ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা আছে। 

মনের মতো ওষুধ খাওয়ার আরেক সমস্যা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। একজন চিকি ৎসক ভালোমতোই জানেন কোন ওষুধের কী সমস্যা, আর তাই তা কাকে দেওয়া যাবে, কাকে যাবে না। নিজে থেকে ওষুধ খেলে এসব বিবেচনা সম্ভব না, তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা বেশি। ব্যথার ওষুধ খেয়ে পেট ফুটো হওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। মোটা হওয়ার জন্য স্টেরয়েড খেয়ে অনেকেই মারাত্মক কুশিং সিনড্রোমে আক্রান্ত হন, যা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। বলে রাখা ভালো, চিকি ৎসকের পরামর্শ ছাড়া হঠা ওষুধ বন্ধ করেও অনেকে বিপদে পড়েন, বিশেষ করে স্টেরয়েড হঠা বন্ধ করলে এডিসনিয়ান ক্রাইসিস হতে পারে, যা থেকে রোগী মারাও যেতে পারে।
সাধারণ ওষুধ, যার অনেকগুলো প্রেসক্রিপশন ছাড়াই পাওয়া যায়, বিশেষ অবস্থায় তাও হতে পারে ক্ষতিকর। আমরা অনেকেই জানি না যে ভিটামিনবা কৃমির ওষুধের মতো সাধারণ ওষুধ গর্ভের শিশুর মারাত্মক ক্ষতি করে। লিভারের রোগীর জন্য প্যারাসিটামলের মতো ওষুধ হতে পারে ক্ষতির কারণ।
অবস্থার জন্য দায়ী আমরা সবাই। রোগী যেমন চিকি ৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাহুল্য ভাবছেন, চিকি ৎসকও তেমনি রোগীকে সঠিক পরামর্শ দিচ্ছেন না, আর কর্তৃপক্ষ হয়ে আছে উদাসীন। 

অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রোগীদের যা মেনে চলা উচিত তা হলো
 
শুধু চিকি ৎসক পরামর্শ দিলেই ওষুধ সেবন করা যাবে।n
 
বিশেষ অবস্থায় (যেমন গর্ভাবস্থা, লিভারের রোগ ইত্যাদি) সাধারণ ওষুধ, যাn প্রেসক্রিপশন ছাড়া পাওয়া যায়, তাও চিকি ৎসকের পরামর্শেই ব্যবহার করতে হবে।
 
শুধু ফার্মাসিস্টের কাছ থেকে ওষুধ কেনা উচিত। কেনার সময় তার মেয়াদ দেখে নিতে হবে।n
 
চিকি ৎসক ওষুধ খাওয়ার যে নিয়ম বলে দেবেন (কতটুকু ওষুধ, কতক্ষণ পরপর, কতn দিন, খাবার আগে না পরে ইত্যাদি), সে অনুযায়ী তা সেবন করতে হবে। প্রয়োজনে তা লিখে রাখুন বা মনে রাখতে অন্যের সাহায্য নিন। নিজে থেকে ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করা যাবে না।
 
নিজে নিজে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করা যাবে না। সুস্থতা বোধ করলেও কোর্সn সম্পূর্ণ করতে হবে। কোনো সমস্যা হলে চিকি ৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

 
একই সঙ্গে অ্যালোপ্যাথিক অন্যান্য পদ্ধতির চিকি ৎসা চালালে তা চিকি ৎসককে জানানো উচিত।n
 
ওষুধ সব সময় আলো থেকে দূরে, ঠান্ডা, শুষ্ক স্থানে, শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন।n
 
ব্যবহারের সময় ওষুধ ভালো আছে কি না দেখে নিন। নাম মাত্রাটা আবার খেয়াল করুন।n
 
অনেক সময় দোকানিরা প্রেসক্রিপশনে লেখা ওষুধ না দিয়ে শুধু বিক্রি করারn জন্য অন্য কোম্পানির অন্য ওষুধ দিয়ে থাকেন, বলেন, ‘একই ওষুধ। ক্ষেত্রে রোগীদের সতর্ক থাকা উচিত এবং প্রেসক্রিপশনে যে ওষুধ লেখা, তা- কেনা উচিত।
ছাড়া চিকি ৎসকেরও ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে। তাঁদের কর্তব্য
 
রোগীকে রোগ এবং ওষুধ সম্পর্কে জানান।
 
ওষুধের সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানান।
 
নিজে থেকে বন্ধ করলে কী ক্ষতি হতে পারে জানান। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে দ্রুত চিকি ৎসককে জানানোর পরামর্শ দিন।

 
কখন কীভাবে ওষুধ বন্ধ করা যাবে জানান।
 
নিয়মিত নিয়মমতো ওষুধ খেতে ৎসাহিত করুন।
 
রোগীর খরচের দিকটা মাথায় রাখুন। অযথা অতিরিক্ত দামি ওষুধ নেহাত প্রয়োজন না হলে বা জীবন রক্ষাকারী না হলে না লেখাই ভালো।
 
প্রেসক্রিপশনে অসুখের পূর্ণ নাম, ওষুধের নাম, মাত্রা, খাওয়ার নিয়ম, কত দিন খেতে হবে ইত্যাদি স্পষ্টাক্ষরে সুন্দরভাবে লেখা উচিত।
এর সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ বিক্রেতার কর্তব্য প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ বিক্রি করা, শুধ ব্যবসায়িক স্বার্থে যেনতেনভাবে যেকোনো ওষুধ বিক্রি না করা। কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব সরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা, দোকানে ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণ এবং সার্বিক তত্ত্বাবধান করা। 

ওষুধের অপব্যবহার, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিকের রেজিস্ট্যান্স থেকে নিজেদের এবং ভবিষ্য প্রজন্মকে বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার


0 comments:

Post a Comment

Afrooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooooz

Drug Index

Social Icons

 
Blogger Templates